কসবায় গত বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুকের জন্য সীমা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধুকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। খুনের ঘটনা ধামা-চাপা দিতে বিষ পানে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে স্বামীর বাড়ির লোকজন। তরি-ঘরি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাতের আধারে লাশ দাফনের চেষ্টা করেছে। খবর পেয়ে রাত তিনটার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় শশুড় বাড়ির লোকজন।
নিহত সীমা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর শহরের শীতলপাড়া এলাকার দুলার মিয়ার মেয়ে। তিনি দুই ছেলে সন্তানের মা ছিলেন। নিহতের লাশ আজ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেছে।
নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সীমা আক্তারকে গত ৭ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের আবদুর রউফের ছেলে আল-আমিন মিয়া (৩০) এর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের মো. আরিয়ান (৫) ও মো. ইসমাইল (৩) নামের দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
বিয়ের পর থেকেই আল-আমিন তাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন। তাদেরকে মোটর সাইকেল কিনার জন্য প্রথমে ৫০ হাজার টাকা, মোবাইল কেনার জন্য কয়েক বার টাকা দেওয়া হয়েছে। যৌতুকের টাকার জন্য আল-আমিনের বাবা-মা, শশুড়-শাশুড়ী ও বোনেরাও নির্যাতন করত।
আল-আমিন তার স্ত্রীকে নিয়ে শশুড় বাড়ি থেকে ঈদের বেড়ানো শেষে গত বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের বাড়িতে যায়। ওইদিনই আল-আমিন তাঁর স্ত্রী ও শশুড় শাশুড়ীর কাছে বিদেশ যাওয়ার জন্য দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করেছেন। শ্বশুড় বাড়ির লোকজন এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আল-আমিন বিকালে স্ত্রীকে জোর-জবরদস্তী করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
আল-আমিন তার স্ত্রী সীমা আক্তারকে বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে শ্বশুড়বাড়িতে খবর দেয় সীমা বিষ পান করেছে। তাকে কসবা হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা বললে রাত আটটার দিকে সীমা আক্তারকে স্বামীর বাড়ির লোকজন কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় এম্বুলেন্সে সীমার বাবা ও মা এবং স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন ছিলেন। সীমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এ সময় তন্তর এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে সীমার মা ও বাবাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দেয় নিহতের স্বামী আল-আমিন। পরে লাশ নিয়ে অন্য একটি এলাকায় চলে যায়। গভীর রাতে লাশটি খেওড়া গ্রামের নিহতের স্বামীর বাড়িতে নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি দাফনের চেষ্টা করেন নিহতের স্বামী ও পরিবারের লোকজন।
পরে নিহতের বাবার বাড়ির লোকজন কসবা থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করেন। খবর পেয়ে কসবা থানা পুলিশ রাত তিনটার দিকে নিহতের স্বামীর বাড়ি থেকে সীমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। আজ শুক্রবার সকালে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে নিহতের স্বামীকে প্রধান আসামী করে শশুড়-শাশুড়ী ও তিন ননদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেছে।
নিহত সীমা আক্তারের বাবা দুলাল মিয়া কাধঁতে কাধঁতে বলেন, বিয়ের সময় যৌতুক হিসাবে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও আসবাবপত দিয়েছি। বিয়ের পর থেকেই মেয়ের স্বামী যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েকে চাপ দিত। প্রথম পর্যায়ে মোটর সাইকেল কিনার জন্য ৫০ হাজার দিয়েছি। মোবাইল কিনার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। ঈদের বেড়ানো শেষে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে ১০ টাকা দিয়েছি। ওই দিন বিদেশ যাওয়ার জন্য দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। আমরা বলেছি, এক লক্ষ টাকা দিব। দুই লক্ষ টাকা কেন দিবনা এ কারনে বাড়িতে গিয়েই আমার মেয়েকে নির্যাতন করে খুন করেছে। পরে আমাদেরকে জানিয়েছে ওষুধ খেয়েছে। তিনি বলেন, তাকে কসবা হাসপাতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওযার পথে আমি ও আমার স্ত্রীকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। খুনটিকে দামাচাপা দেওয়ার জন্য তড়ি-ঘরি করে লাশ দাফনের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, আমি আমার মেয়ের খুনিদের বিচার দাবী করছি।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূইয়া বলেন, রাতেই নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ঘটনাটি হত্যা না আত্নহত্যা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।